সৌরজগতের কিছু কিছু গ্রহের নিজস্ব বলয় রয়েছে। এর মধ্যে শনির বলয় অন্যতম। গ্রহগুলোর মাঝে শনির সবচেয়ে স্পষ্ট ও দর্শনীয় রিং বিদ্যমান। এছাড়াও বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনেরও বলয় রয়েছে। তবে এদের চারপাশের বলয় গুলো শনি গ্রহের মত তেমন স্পষ্ট নয়।
সাধারণত গ্রহের চারপাশে বিচ্ছিন্ন গ্যাসীয় মেঘপুঞ্জ শীতল হয়ে বলয়ের মত অবয়ব সৃষ্টি করে। যেহেতু সৌরজগতের কেন্দ্র হল সূর্য, তাই সূর্য থেকে দূরবর্তী গ্রহগুলোতে বলয়ের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কারণ সূর্য থেকে বেশ দূরের গ্রহ (যেমন: বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন) তুলনামূলক অনেক বড় এবং গ্যাসীয় উপাদানে তৈরি। ফলে উক্ত গ্রহগুলোর চারপাশে অনেক গুলো উপগ্রহ সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ বিদ্যমান। তাই এই উপগ্রহ ও গ্যাসীয় উপাদানগুলোর গুলোর সাথে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্য থেকে তুলনামূলক দূরের গ্রহগুলোর চারপাশে বিচ্ছিন্ন গ্যাসীয় মেঘপুঞ্জ শীতল হয়ে গ্রহের চারপাশে বলয়ের সৃষ্টি করে।
কিন্তু পৃথিবী সূর্যের নিকটতম গ্রহ হওয়ায় এটি তুলনামূলক ছোট এবং পাথুরে। আর সূর্যের অতি উচ্চ তাপের কারণে রিং সৃষ্টি হওয়ার জন্য উপযুক্ত শীতল গ্যাসীয় মেঘপুঞ্জ অনুপস্থিত। ফলে পৃথিবীর মত সূর্যের নিকটবর্তী গ্রহগুলোর রিং তৈরি হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ থাকে না।
পৃথিবী থেকে শুধুমাত্র শনি গ্রহের বলয় স্পষ্টভাবে দেখা যায়। বাকি বৃহস্পতি, ইউরেনাস, নেপচুনের বলয়গুলো তুলনামূলক স্পষ্ট না হওয়ায় পৃথিবী হতে সেসব রিং বা চাকতি দেখা যায় না।
আবার একটি প্রশ্ন থেকেই যায় যে, বলয়ের উপর কি হাঁটা সম্ভব? দূর থেকে আমরা যখন কোনো গ্রহের (যেমন: শনি গ্রহ) বলয় দেখতে পাই, আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এতে হেঁটে বেড়ানো যাবে। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে এটি সম্ভব নয়।
কারণ, বলয় বা চাকতি যেসব উপাদানে তৈরি সেসব উপাদানের একটি থেকে অন্যটির বেশ দূরত্ব রয়েছে ও এরা মূলত গ্যাসীয় পদার্থের তৈরি। আবার এটি সর্বদা কম্পমান এবং অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ঘূর্ণায়মান। এছাড়াও কতগুলো ছোট ছোট বলয় পাশাপাশি থেকে একটি বৃহদাকার বলয়ের আকৃতি তৈরি করে। তাই বলয়ের উপর হাঁটা অসম্ভব।
আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে, সূর্যের নিকটতম হওয়ায় এবং বৃহৎ উপগ্রহ থাকায় পৃথিবীর চারপাশে রিং নেই। তবে পৃথিবীর যদি বলয় থাকত, তাহলে রোদ-বৃষ্টি, জোয়ার-ভাটা, দিন-রাত্রি ইত্যাদির তারতম্য ঘটত। দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানে বলয়ের ছায়ার কারণে অন্ধকার দেখা যেত এবং উক্ত স্থান অপেক্ষাকৃত শীতল হতো। এছাড়াও কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণেও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হত।
নুসরাত জাহান চৌধুরী/ নিজস্ব প্রতিবেদক