“আপনার একটা জমজ ভাই ছিল যাকে আপনি খেয়ে ফেলছেন!”- এটিকে ভৌতিক গল্প বা কথা সাহিত্যের মতো শোনাতে পারে, তবে ব্যাপার কিন্তু তা নয়। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি বিস্ময় যাকে “কাইমেরা” বলা হয়, যেখানে আপনি ঘটনাটিকে জমজ ভাইকে খেয়ে ফেলার সাথে তুলনা করতে পারেন।
২০০২ সালে, একজন গর্ভবতী আমেরিকান মহিলা তার প্রাক্তনের সাথে তাদের সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছিলেন। তাই মামলার পদ্ধতি অনুযায়ী, তারা উভয়ই জৈবিক বাবা-মা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য ডিএনএ নমুনা সরবরাহ করেছিলেন। যাইহোক, পরীক্ষার ফলাফল প্রমাণ করেছিল যে তার প্রাক্তন আসলেই সন্তানটির পিতা…কিন্তু মহিলাটি সন্তানটির মা নন!
সমস্ত কাগজপত্র এবং সাক্ষী প্রমাণ করেছিল যে তিনিই মা এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তার ডিএনএ বলছিল অন্য কথা। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে বিচারক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে আসন্ন সন্তানের জন্ম ও পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত মামলাটি স্থগিত থাকবে। তবে বাচ্চা যখন জন্ম নিলো, আবারও মায়ের ডিএনএ মিললো না! তার শরীর থেকে অনেকগুলো নমুনা নেয়ার পর, একমাত্র তার জরায়ুর ডিএনএ-ই প্রমাণ করেছিল যে তিনিই সন্তানের মা।
গবেষণার পরে চিকিৎসকরা আবিষ্কার করলেন যে মায়ের শরীরে দুই জনের ডিএনএ ছিল। তার গর্ভে যমজ সন্তান ছিল! কিন্তু প্রথম ভ্রূণ মারা যাওয়ায়, অন্য ভ্রুণটি ঐ কোষগুলোকে শোষণ করে নেয়, এই ঘটনাকে “কাইমেরা” বলে। এসব ক্ষেত্রে যমজ ভ্রূণ দুটি যদি আইডেন্টিক্যাল টুইন (জমজ) হয়, তবে কোনও সমস্যা হয় না, যেহেতু তাদের DNA একই। কিন্তু যদি নন- আইডেন্টিক্যাল টুইন (জমজ) হয়, তবে তাদের DNA আলাদা হওয়ায় ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর শরীরে দুই ধরণের DNA থাকবে এবং সে একজন কাইমেরা হিসেবে বড় হবে।
এরকম আরোও বহু ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো একজন ডাচ অ্যাথলেট মহিলাকে নিয়ে। তিনি ১৯৫০ সালে অবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর কারণ হলো- যদিও তাঁর কাগজপত্রগুলো নির্দেশ করেছিল যে তিনি একজন মহিলা, কিন্তু তার ডিএনএতে ক্রোমোজোম ওয়াইয়ের চিহ্ন রয়েছে, যা প্রকাশ করে যে তিনি একজন পুরুষ! তার সময়ে চিকিৎসাবিদ্যা ততটা উন্নত না থাকার কারণে তার ভেতরে যে ২ জনের ডিএনএ আছে, এটি আবিষ্কার করতে বছরখানেক সময় লেগেছিল।
অন্য একটি ঘটনায় দেখা যায় যে, একজনের শরীরে (যার রক্তের টাইপ O) অন্য মানুষের O টাইপ রক্ত প্রবেশ থামাতে হয়েছিল। গবেষণার পরে দেখা গেল যে, দাতার এক যমজ ভাই ছিল, এ যাত্রায় সে জীবিত ছিল! আর তাদের উভয়েরই ৯৫% রক্তের টাইপ O এবং ৫% রক্তের টাইপ B এর মিশ্রণের সৃষ্টি করেছিল। অর্থাৎ যখন গর্ভে ছিলেন, তখন অন্য ভ্রূণকে শোষণ করা হয়েছিল!
কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, কিছু স্ব-প্রতিরোধক রোগের কারণে এসব হতে পারে। কারণ দেহ অন্য ভ্রুণকে দেহের বহিরাগত কোষগুলির উপস্থিতি বলে মনে করে এবং ভ্রূণটিকে আক্রমণ করে বসে।
মূলত এসব ঘটনা আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি সাধারণ। ধারণা করা হয়, ৩ জনের মধ্যে ১ জন মানুষের কাইমেরা আছে! বেশিরভাগ সময় বহিরাগত কোষগুলো এতই অল্প হয় যে, তারা চিকিৎসাগতভাবে আমাদের প্রভাবিত করতে পারে না।
এখনও এই বিস্ময় সম্পর্কে অনেক কিছু জানার বাকি রয়েছে। হতে পারে এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত আবিষ্কার গুলো ভবিষ্যতে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুজে পেতে সাহায্য করবে।
সায়েদা পিয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : Britannica, Research Gate, Lydia Fairchild – Wikipedia ,Foekje Dillema – Wikipedia