বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় হচ্ছে “কফি“। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যাদের কফি ছাড়া দিনটাই যেন শুরু হতে চায় না! আবার অনেকের কফির প্রতি ভয়াবহ রকমের অনীহা রয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত কফি পান করেন, তাদের মৃত্যু হার তুলনামূলক কম। অর্থাৎ, পরিমিত কফি পান মানুষের জন্য নিরাপদ এবং খুবই উপকারী।
পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা থেকে জানা যায়, কফি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, পার্কিনসন ডিজিজ এবং কিছু ক্যান্সারের রোগের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী। কফির মূল উপাদান হলো ক্যাফিন। তাই অত্যাধিক মাত্রায় কফি সেবন করলে হার্ট রেট বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন ধরনের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ, অতিরিক্ত কফি পান এর কারনে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
এখন আপনি জানলে নিশ্চয়ই অবাক হবেন, “নিয়মিত কফি পানকারী ব্যক্তিদের রক্তচাপ অন্যদের তুলনায় কম বা স্বাভাবিক থাকে”।
‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন‘ জার্নালে এই বিষয় সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সাউথ অস্ট্রোলিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক কফি পানের সাথে হৃদরোগের সম্পর্ক পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গবেষণা করেন।
গবেষণায় দেখা যায়, যেসকল ব্যক্তির উচ্চরক্তচাপ, অ্যানজাইনা, অ্যারিথমিয়া রয়েছে তারা তুলনামূলকভাবে কম কফি পান করে এবং তারা ডিক্যাফিনেটেড জাতীয় কফি বেশি পান করে।
গবেষনাপত্রটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, জেনেটিক সমস্যার কারণে মূলত কিছু কিছু ব্যক্তি তুলনামূলকভাবে কম কফি পান করে। গবেষকরা আরও বলেন, কফি কম খাওয়ার কারণেও হৃদরোগ হতে পারে।
প্রফেসর এলিনা হাইপেন বলেন, “হার্টকে সুস্থ রাখতে পরিমিত কফি পান করা উচিত। খুব বেশি পরিমাণ কফি পান অথবা, কফি একদমই পান না করা হার্টের জন্য ভালো নয়। কারণ পরিমিত কফি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হার্টকে সুস্থ রাখে”।
কিন্তু যেসকল ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং কফি পান করলে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়, তাদের উচিত কফি পান থেকে বিরত থাকা!
বিজ্ঞানীরা (৩৭-৭৩) বছর বয়সের ৩,৯০,৪৩৫ জন ব্রিটিশ নাগরিকদের নিয়ে একটি গবেষণা করেন। গবেষণার ফলাফলটি UK Biobank ডাটাবেজে প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যারা নিয়মিত কফি পান করে তাদের হার্ট রেট, রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার লক্ষণগুলো গবেষকরা পরিমাপ করেন এবং নোট করেন।
গবেষকরা একটি পরিসংখ্যান করেন, যা Mendelian Randomization নামে পরিচিত। পরিসংখ্যানের বিষয়বস্তু ছিল : যেসকল ব্যক্তি নিয়মিত কফি পান করে, তাদের কি কি হার্টের লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে, তারা কেন তুলনামূলক কম ক্যাফিন জাতীয় কফি পান করে। অর্থাৎ, হার্টের সমস্যাগুলোই কি তাদের কফির প্রতি অনীহার অন্যতম কারণ?
পরিশেষে, পরিসংখ্যানটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, “নির্দিষ্ট কিছু জিনগত সমস্যার কারণে কিছু কিছু ব্যক্তির কফির প্রতি অনীহা প্রকাশ পায়”।
অধ্যাপক হাইপেন বলেন, “কোন কোন ব্যক্তির উচ্চমাত্রার ক্যাফিন সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে, তাই তারা তুলনামূলক বেশি ক্যাফিনযুক্ত কফি পান করে। আবার অনেকের খুব সামান্য পরিমাণ ক্যাফিন গ্রহণের সার্মথ্য রয়েছে এবং কেউ কেউ জিনগত ত্রুটির কারণে একদমই ক্যাফিন গ্রহণ করতে পারে না”।
অধ্যাপক হাইপেনকে প্রশ্ন করা হয়, “যখন কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত কফি পান করে, তখন কি তার উত্তেজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?”
অধ্যাপক হাইপেন বলেন, “গবেষনায় এমন কোন কিছু দেখা যায় নি। তবে কফি খাওয়ার পরে একজন ব্যক্তির যে ধরনের অপ্রীতিকর অনুভূতি হয় তা অনেক সময় কফি পান করার ইচ্ছাকে হ্রাস করতে পারে।”
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : Medical News Today